উদ্দালক চক্রবর্তী
𝄹২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের কোনও এক কেজো সন্ধ্যায় অফিসে কাজের ফাঁকে ফেসবুক ঘাঁটছি, হঠাৎ মেসেঞ্জারের নোটিফিকেশন স্ক্রিনের ওপর ভেসে উঠল। বার্তা এসেছে প্রাক্তন সহকর্মী অর্ঘ্যপ্রসূন রায়চৌধুরীর থেকে। অতীতে একটি দৈনিক সংবাদপত্রে কাজের সূত্রে পরিচয় হলেও সর্বভারতীয় সংবাদসংস্থায় চাকরি নিয়ে তিনি বাংলা ছাড়ার পরে আর যোগাযোগ ছিল না। ফেসবুকে পুরনো আলাপ ঝালিয়ে নেওয়ার পরেই তিনি জানালেন, বাংলা ভাষায় নিউজ ওয়েবসাইট আনার পরিকল্পনা করেছে হিন্দুস্তান টাইমস সংস্থা, যার সম্পাদকের দায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছে তাঁর ওপরেই। কর্মসূত্রে তিনি দিল্লিবাসী, তাই কলকাতায় ডেস্ক সামলানোর দায়িত্বে এই অধমকে ভেবে রেখেছেন অর্ঘ্য। বলতে বাধা নেই, বিভিন্ন কারণে ঠিক সেই সময় রোজের একঘেয়ে কাজে বিরক্ত হয়ে আমিও নতুন কোনও সুযোগের সন্ধানে ছিলাম। তাই অর্ঘ্যপ্রসূনের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে সে বছরের নভেম্বর মাসে যোগ দিলাম হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা পোর্টালে।
𒐪ইতিমধ্যে নতুন ওয়েবসাইটের লোগো থেকে ডিজাইন-সহ খুঁটিনাটি বিষয়ে জ্ঞানার্জন হয়েছে। গভীর রাতের দীর্ঘ ফোনালাপের সুবাদে ওয়েবসাইট সম্পর্কিত নানান পরিকল্পনা ও ভাবনা সম্পর্কেও ধারণা তৈরি হয়েছে। অবশেষে নভেম্বরের ১১ তারিখ প্রথম হাজির হলাম নিউ টাউনের ডিএলএফ কমপ্লেক্সে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার তৎকালীন অফিসে। জনপ্রিয় এফএম রেডিও চ্যানেল অফিসের এককোণে ঠাঁই হয়েছে ডিজিটাল ডেস্কের তিন কর্মীর। কয়েক মাস আগে যোগ দেওয়া অয়ন দাস ও প্রিয়াঙ্কা মুখোপাধ্যায় ছাড়াও আলাপ হল এইচআর ডেস্কের অর্ঘ্য সেনগুপ্তর সঙ্গে। এফএম চ্যানেল বলে কথা, অষ্টপ্রহর স্পিকারে বেজে চলেছে হিট হিন্দি-বাংলা ছবির গান। সত্যি বলছি, আজীবন নানান কিসিমের নিউজরুমে কাটানোর পরে এমন সাংগীতিক কর্মস্থল দেখে অস্বস্তি নয়, বরং বেশ মজাই লেগেছিল।
𝓀সেই প্রথম, কোনও ডিজিটাল নিউজ মিডিয়ার গোড়াপত্তনের সঙ্গে যুক্ত থাকার রোমাঞ্চ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করার সুযোগ হল। এদিকে চালু হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে ধীরে ধীরে বহরবৃদ্ধি হতে শুরু করল ডেস্কের। দলে যোগ দিলেন আর এক প্রাক্তন সহকর্মী পিনাকী ভট্টাচার্য। অন্যদিকে, কাজের পরিধি বাড়তে থাকায় ভার্চুয়াল নিউজরুমে বাড়তে থাকল ফ্রিল্যান্সার সাংবাদিকের সংখ্যাও।
🔯ওয়েবসাইট পুরোদস্তুর চালু হলে কপি এডিটিংয়ের ফাঁকে তখন আমাদের চোখ গুগল অ্যানালিটিক্স-এর হিসেব-নিকেশে সাঁটা। কখনও ইউজারের সংখ্যা বা ভিউ চড়চড় করে বাড়তে থাকলে সবাই মিলে ঝুঁকে পড়ি মনিটরের স্ক্রিনের ওপরে। ৫০০, ১০০০, ২০০০ থেকে যদি ৩০০০ যদি ছুঁয়ে ফেলে ভিউয়ারের সংখ্যা, তাহলে একচোট লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে সদলবলে ছুটি নীচের চায়ের দোকানে সেলিব্রেট করতে। চোখের সামনে এভাবে তিল তিল করে বাড়তে থাকা সদ্যজাত নিউজ পোর্টাল ঘিরে তখন যেন সবার আবেগের ফল্গুধারা ছুটছে। সকাল থেকে রাত, সেই অবিশ্রাম অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণের কথা ভাবলে আজও যেন শিহরণ জাগে।